Wednesday - 2 April, 2025 +10 344 123 64 77

Sunday, March 07, 2010

হঠাৎ আবিষ্কার- আবিষ্কারের পেছনের কথা


বিজ্ঞানীরা কেবল নিদি‍‌ষ্ট প্যাটান নিয়েই কাজ করেন। তাদের কাজের মধ্যে আছে নিয়মতান্ত্তিকতা ও নিদিষ্ট প্যাটান। তবে মজার ব্যাপার হলো, নিয়ন্ত্রিত কাজের এই ধারা থেকে তারা যেমন সবসময় আশাব্যন্জ্ঞক ফল পান না তেমনি অনেক সময় অনেক নতুন জিনিসও আবিষ্কার করে ফেলেন তারা হঠাৎ করেই।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক জিনিসই এইরকম হঠাৎ আবিষ্কারের ফল। এমন কিছু আবিষ্কারের গল্পই আজ আপনাদের জানাব।

সুপার গ্লু
সুপার গ্লু আমরা কে না চিনি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজেই আমরা এটি ব্যবহার করি ভেঙ্গে যাওয়া নানা জিনিস জোড় লাগানোর কাজে। এর বৈজ্ঞানিক নাম সায়ানোয়াক্রাইলেট (Cyanoacrylate)। ডক্তর হ্যারি কুভার ১৯৪২ সালে বন্দুকের সাইটর জন্য স্বচ্ছ প্লাস্টিক তৈরির গবেষনা করতে গিয়ে তিনি আচমকা আবিষ্কার করে ফেলেন সুপার গ্লু।কিন্তু তখন এর মরম বুঝতে পারেনি।নয় বছর পর তিনি জেটপ্লেনের ককপিটের জন্য তাপিনরোধক পলিমর তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু তার চেষ্টা ব্যথ হয় এবং নতুন একটি বস্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে আবিষ্কার করে ফেলেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আঠালো ঠিক নয় বছর আগে তিনি যা পেয়েছিলেন। অবশেষে তিনি বুঝতে পারেন জোড় লাগানোর দুদান্ত ক্ষমতা রয়েছে তার অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারটির। আর এর ফলসূতিতেই ১৯৬৮ সালে সুপার গ্লু নামে এটি বাজারজাতা করেন।
আসলে সুপার গ্লু প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিছুতে পরিনত হয়েছিল । ভিয়েতনাম যুদ্ধে অনেক সৈনিকের প্রান বাঁচিয়েছিল এই সুপার গ্লু। যুদ্ধক্ষেএ থেকে হাসপাতালে আনার আগে তাদের ক্ষত বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হত এই সুপার গ্লু। 
      
পোস্ট ইট নোটস
১৯৭৬ সালে স্পেন্সার সিলভার মিনেসোটা মাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির রিসাচ ল্যাবে শক্তিশালী অ্যাডহেসিভ তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গবেষনার ফল হল উল্টোটা। অত্যন্ত দুবল প্রকৃতির অ্যাডহেসিভ তৈরী হল তার গবেষনার ফলে। এটা আটকে থাকে কিন্তু অতি সহজেই একে খুলে নেয়া যায়।আবিষ্কারটি তার কাছে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল।
এর চার বছর পর এক দিন স্পেন্সার সিলভারের এক সহকর্মী গির্জায় প্রার্থনা সংগীত গাইছিলেন তার প্রার্থনা সংগীত বই (The Hymn Book) থেকে।তার সহকর্মী হিয়াম বইয়ের দরকারি পৃষ্ঠা গুলো মার্কার কলম দিয়ে একসাথে রাখা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে সমস্যা সমাধান করল স্পেন্সার সিলভারের চার বছর আগের সেই অনাকাক্ষিত আবিষ্কৃত আঠা। আঠা লাগিয়ে দেয়ার পর পৃষ্ঠা গুলো জায়গামতই থাকলো কিন্তু প্রয়োজনের সময় কোন সমস্যা ছাড়াই পৃষ্ঠা গুলো উল্টানো যাচ্ছিল।
আর এভাবেই আবিষ্কৃত হয় বর্তমানের একটি গুরুত্বপূর্ন অফিসিয়াল আইটেম পোস্ট ইট নোটস । কেবল মাএ অফিসিয়ালই নয় ঘরে বাহিরে সর্বক্ষেএ কোন না কোন কাজে এর ব্যবহার হচ্ছে।

স্কচগার্ড
পোস্ট ইট নোটস মতই মিনেসোটা মাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির রিসাচ ল্যাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল যুগন্তকারী আবিষ্কার- স্কচগার্ড (Scotchgard)।

১৯৪৩ সালে প্যাটসি শারম্যান (Patsy Sherman) নামে এক জন গবেষক এমন এক ধরনের রাবার তৈরির চেষ্টা করছিলেন যা এয়ারত্ক্রফট ফিউলের সংস্পর্শে গেলে বিকৃত হবে না।প্যাটসি শারম্যানের সহকারী এক্সপেরিমেন্টাল যৌগ দূর্ঘটনাবশত ফেলেদেন প্যাটসি শারম্যানের জুতোর মধ্যে। প্যাটসি শারম্যান জুতো থেকে পদার্থ গুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কোন জিনিসেই কোন কাজ হচ্ছে না। পরে তিনি ঐ পদার্থ নিয়ে গবেষনা করেন একে কাজে লাগানোর জন্য এর উন্নয়ন ঘটান।এর তিন বছর পর ১৯৪৬ সালে স্কচগার্ড নামে বাজারে আসে। বিশ্বের প্রায় সব জুতোয় ভেলভেটের আস্তরন দিতে স্কচগার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কেবল চামড়ার জিনিসের সুরক্ষা দিতেই নয় আদ্রতা নিয়ন্ত্রনে, দাগ ওঠাতে, পানি ও ফাংগাস থেকে জিনিস রক্ষায় এর জুড়ি নেই।

ভেলক্রো            
জ্যাকেট কিংবা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সময় যেসব কাপড় পরি কিংবা অ্যাথলেটিক সু বা সান্ডালে ব্যবহৃত হয় এ ধরনের স্ট্রিপ জোড়া। আপনার লাগেজে কিংবা স্কুল ব্যাগেও অনেক ক্ষেত্রে এ  ধরনের স্ট্রিপ জোড়া ব্যবহার করেন আপনি। এমনকি মহাকাশচারীদের স্পেসসুটেও ব্যবহার করা হয় এ  ধরনের স্ট্রিপ জোড়া । একে বলা হয় ভেলক্রো। কিন্তু কি করে  আবিষ্কার হলো এ কাজের জিনিস? কার মাথায় প্রথম খেললো এমন জিনিস তৈরির আইডিয়া?
১৯৪০ সালের সুইস বিজ্ঞানী জর্জ ডি মেস্ট্রাল বিকালে হাটতে বের হয়ে যখন বাড়ি ফিরে এলেন তিনি লক্ষ্য করলেন তার ডগকোট এবং প্যান্টে ককলবার ফলে ভরে আছে। এমন অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আপনারও হয়েছে যে, গ্রামের ক্ষেত-খামারে হাটতে গিয়ে পরনের কাপড়ে ছোট ছোট কাটা জাতীয় এক ধরনের ফল আটকে গেছে। গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় একে বলে ভাটুইগাছ। জর্জ যেহেতু কৌতূহলী মানুষ, তাই তিনি দেখতে চাইলেন কেন এমনটা হচ্ছে। বলা নেই, কওয়া নেই, কাপড়ে আটকে পড়ছে একটা কাটাওয়ালা ফল। মাইক্রোসকোপের তলায় রেখে ফলটাকে পর্যবেক্ষণ করলেন তিনি। দেখলেন, হুক আকৃতির গঠন প্রাকৃতিক কাটাগুলোর।

জর্জ বুঝতে পারলেন, দুটি সারফেসকে শক্ত করে আটকানোর নতুন একটা কার্যকর উপায় সম্ভবত তিনি খুজে পেয়েছেন। তবে এ আবিষ্কারটিকে পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে তার সময় লাগলো আট বছর। ঘটনা পরম্পরায় ফ্যাব্রিক নাইলনের দুটো স্ট্রিপ তৈরি করলেন।

এর একটাতে হাজার হাজার ছোট্ট হুক, ঠিক ওই ভাটুইগাছের ফলগুলোর মতো। আরেকটা স্ট্রিপে নরম ধরনের অসংখ্য লুপ তার ফ্যাব্রিকের প্যান্টের মতোই কিছুটা। এ দুটি আইটেম তৈরি করার জন্য তিনি বেছে নিলেন দুটি আলাদা ওয়ার্কশপ। কারণ এক জায়গা থেকে দুটি প্রটোটাইপ তৈরি করলে তার আবিষ্কার চুরি হয়ে যেতে পারে। স্ট্রিপ দুটো চাপ দিয়ে একসঙ্গে করলে ওই দুটো বেশ শক্তভাবে আটকে যায়। আবার খুব সহজে এদের বিচ্ছিন্ন করা যায়। জিনিসটা হালকা, দীর্ঘস্থায়ী এবং ধোয়াও সম্ভব।

সংগ্রহীতঃ যায়যায়দিন

0 comments:

Post a Comment